Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

যেসব লক্ষণে বুঝবেন থায়রয়েড হরমোনের ঘাটতি, কী করবেন? 

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২১, ০৫:৩৭ এএম

যেসব লক্ষণে বুঝবেন থায়রয়েড হরমোনের ঘাটতি, কী করবেন? 

ফাইল ছবি

থায়রয়েড হরমোনজনিত সমস্যায় আমরা অনেকে ভোগে থাকি। প্রথম দিকে অনেকে টেরই পাই না এই সমস্যার কথা। জটিলতা বাড়তে থাকলে আমরা সমস্যা অনুভব করি। শুরুতে ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবন যাপন করা যায়। 

থায়রয়েড হরমোনের ঘাটতি কিছু লক্ষণ আছে। সেগুলো ও এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে যুগান্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম।
  
থায়রয়েড হরমোনের তারতম্যজনিত সমস্যা দুই রকম হতে পারে। যেমন- শরীরে থায়রয়েড হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে বা হাইপোথায়রয়েডিজম, আবার বেড়ে গেলে হাইপারথায়রয়েডিজম। 

হাইপোথায়রয়েডিজমের রোগের সংখ্যা হাইপারথায়রয়েডিজমের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের দেশে সেটি আরও প্রকট। বাংলাদেশের আয়োডিন ঘাটতিজনিত ব্যাপক জনগোষ্ঠী এ সমস্যায় আক্রান্ত। আমাদের সামগ্রিক জীবনমানের ওপরে থায়রয়েড হরমোন ঘাটতি সুগভীর প্রভাব বিস্তার করে আছে। আমাদের দেশে বন্ধ্যা দম্পতি ও স্থূলদেহী জনগোষ্ঠীর পেছনে হাইপোথায়রয়েডিজম অন্যতম ক্রীড়নক।

লক্ষণ

ক) সাধারণ লক্ষণগুলো
১) অবসাদগ্রস্ততা বা ঘুমঘুম ভাব;
২) ওজন বৃদ্ধি;
৩) ঠান্ডা সহ্য করতে না পারা;
৪) গলার স্বরের কোমলতা কমে যাওয়া এবং অনেকটা ভারী বা কর্কশ শোনানো।
৫) গলগণ্ড নিয়ে প্রকাশ করতে পারে।

খ) হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যা
    ১) হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, বুকে ব্যথা অনুভব করা অথবা হার্ট ফেইলিওর হতে পারে।
    ২) হৃদযন্ত্রের আবরণে অথবা ফুসফুসের আবরণে পানি জমা।

গ) স্থায়ু ও মাংসপেশির সমস্যা

১) মাংসপেশিতে ব্যথা বা শক্ত চাপ অনুভব করা;
২) স্নায়ু ও মাংসপেশিনির্ভর রিফ্লেক্স কমে যাওয়া;
৩) বধিরও হতে পারে;
৪) বিষণ্ণতা ও মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা;
৫) মাংসপেশির টান কমে যাওয়া।

ঘ) চর্ম বা ত্বকের সমস্যা
    ১) শুষ্ক, খসখসে ও ব্যাঙের ত্বকের মতো হয়ে যাওয়া;
    ২) ভিটিলিগো নামক এক ধরনের শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হওয়া;
    ৩) চর্মে মিক্সিডিমা নামক এক ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়া।

ঙ) প্রজননতন্ত্রে সমস্যা
    ১) মাসিকের সময় বেশি রক্তপাত হওয়া;
    ২) বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হওয়া;
    ৩) প্রজননে অক্ষমতা।

চ) পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা
    ১) পায়খানা শক্ত হওয়া;
    ২) পেটে পানি জমতে পারে।

হাইপোথাইরয়েডিজম হলে শিশুদের বেলায় অবর্ধনজনিত রোগ বা ক্রিটিনিজম হবে এবং উঠতি বয়স্কদের বা প্রাপ্তবয়স্কদের মিক্সিডিমা হয়। ক্রিটিনিজমের লক্ষণগুলোর মধ্যে উলে­খযোগ্য হলো- মাংসপেশি ও হাড় এবং স্নয়ুতন্ত্রের সঠিক বর্ধন না হওয়া। এর ফলে শিশু বেঁটে হয়, বোকা বা বুদ্ধিহীন হয়ে থাকে। জিহ্বা বড় হবে ও মুখ থেকে বেরিয়ে আসে এবং নাভির হার্নিয়া হয়। হাইপোথাইরয়েডিজম হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে অটোইমিউন ধ্বংসপ্রাপ্ত, ওষুধ, টিএসএইচ স্বল্পতা ও গর্ভাবস্থায় মায়ের থাইরয়েড হরমোন স্বল্পতা ইত্যাদি।

কম হরমোনের চিকিৎসা

রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন। তবে অধিকাংশ রোগীই ভোগেন হাইপোথায়রয়েডিজম অর্থাৎ তাদের থায়রয়েড গ্র্যান্ড থেকে কম পরিমাণ থায়রয়েড হরমোন থাইরক্সিন নিঃসৃত হয়। এ ঘাটতি পূরণ করার জন্য ডাক্তাররা তাদের থাইরক্সিন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীকে ১০০ থেকে ২০০ মাইক্রোগ্রাম থাইরক্সিন দেওয়া হয়।

ওষুধ খাওয়ার নিয়ম

সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে কিনা, তা রোগের ধরনের ওপর নির্ভরশীল। যার থাইরক্সিন ঘাটতি সামান্য বা উপসর্গও কম, তার সারা জীবন ওষুধ খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ৬ মাস থেকে ২ বছরেই সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। অনেক ওষুধ ছাড়াও সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু যার একেবারেই থাইরক্সিন নিঃসরণ হয় না বা কোনো কারণে থায়রয়েড গ্রান্ডটিকেই কেটে বাদ দিতে হয়েছে, তাদের সারা জীবন ওষুধ না খেয়ে উপায় নেই।

ওষুধ খাওয়া হঠাৎ বন্ধ করা সম্পর্কিত বিষয়

ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যেতে পারে। তবে নিজের ইচ্ছায় ওষুধ খাওয়া বন্ধ করলে অল্প দিনের মধ্যেই রোগটা ভয়ঙ্করভাবে ফিরে আসবে। জীবন সংশয় হতে পারে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কারণ শরীরে স্বাভাবিকভাবে যেটুকু থাইরক্সিন হরমোন থাকা দরকার, সেটি নেই বলেই তো বাইরে থেকে তা গ্রহণ করতে হয়। এক কথায় ঘাটতি পূরণ। সারা জীবন খেলেও কোনো অসুবিধা হয় না।

রক্ত পরীক্ষা

চিকিৎসা চলাকালীন বছরে অন্তত একবার রক্তে থাইরক্সিন বা T4 এবং TSH পরীক্ষা করান প্রয়োজন।
 

থাইরয়েড হরমোন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম